وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً،
‘আর আল্লাহ্র জন্য লোকদের উপর বায়তুল্লাহ্র হজ্জ ফরয করা হ’ল, যারা সে পর্যন্ত যাবার সামর্থ্য রাখে’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)।
وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوْكَ رِجَالاً وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِيْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيْقٍ-
‘আর তুমি জনগণের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার (পথশ্রাস্ত) কৃশকায় উটের উপর সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত হ’তে’ (হজ্জ ২২/২৭)।
وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يآ أَيُّهَا النَّاسُ قَدَ فُرِضَ عَلَيْكُمُ الْحَجُّ فَحُجُّوا، رواه مسلم-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে জনগণ! তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হজ্জ কর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৫)।

হে মুসলিম ভাই ও বোনরা

হজ্জ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। সামর্থ্যবান মুমিনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব ইসলামের এই রুক্ন আদায় করা ফরয। হজ্জ মুমিনকে যেমন আল্লাহ্র সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়, তেমনি তার আত্মিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঙ্গে সঙ্গে হজ্জ মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ্র স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী মহাজাতিতে পরিণত হ’তে উদ্বুদ্ধ করে।

জিবরীল (আঃ) যখন দ্বীন সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, তখন উত্তরে তিনি বললেনঃ

الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً.

ইসলাম হচ্ছে
(১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল।
(২) ছালাত কায়েম করা।
(৩) যাকাত আদায় করা।
(৪) রামাযানে ছিয়াম পালন করা।
(৫) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা। (বুখারী ও মুসলিম)

ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত:

কোন নেক আমলই কবুল হয় না তিনটি শর্ত পূরণ করা ব্যতীত।
(১) ছহীহ আক্বীদা
(২) ছহীহ তরীক্বা ও
(৩) ইখলাছে নিয়ত।
অতএব শিরকবিমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের খালেছ নিয়তে ও পরকালীন মুক্তির স্বার্থে ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছহীহ তরীক্বায় হজ্জ করলেই কেবল তা আল্লাহ্র নিকট কবুল হবার সম্ভাবনা থাকবে।

কবুল হজ্জের নিদশর্ন সমূহ :

কবুল হজ্জের নিদর্শন (علامات الحج المبرور):
‘হাজ্জে মাবরূর’ বা কবুল হজ্জ বলতে ঐ হজ্জকে বুঝায়,
(ক) যে হজ্জে কোন গোনাহ করা হয়নি এবং যে হজ্জের আরকান-আহকাম সবকিছু (ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক) পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হয়েছে।
(খ) হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর পূর্বের চাইতে উত্তম হওয়া এবং পূর্বের গোনাহে পুনরায় লিপ্ত না হওয়া’। ফৎহুল বারী ৩/৪৪৬; হা/১৫১৯-এর ব্যাখ্যা।
আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছিলেন, …سَتَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ ، فَسَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ ، أَلاَ فَلاَ تَرْجِعُوا بَعْدِى ضُلاَّلاً، ‘ হে লোকসকল! সত্বর তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। অতএব সাবধান! তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৫৯।
৩. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘ইসলাম, হিজরত এবং হজ্জ মুমিনের বিগত দিনের সকল গুনাহ ধ্বসিয়ে দেয়’। মুসলিম, মিশকাত হা/২৮।
৪. তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরাহ্র মধ্যে পারম্পর্য বজায় রাখো (অর্থাৎ সাথে সাথে কর)। কেননা এ দু’টি মুমিনের দরিদ্রতা ও গোনাহ সমূহ দূর করে দেয়, যেমন স্বর্ণকারের আগুনের হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা ছাফ করে দেয়…’। তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৫২৪।
তিনি আরও বলেন, ওমরাহ সর্বদা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত’। আবুদাঊদ হা/১৭৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯০।
সম্ভবত: সে কারণেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় ছাহাবীগণকে প্রথমে ওমরাহ সেরে পরে হজ্জ করার অর্থাৎ ‘তামাত্তু হজ্জ’ করার তাকীদ দিয়েছেন এবং না করলে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন। আবুদাঊদ হা/১৭৮৫, ৮৭।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, إِنَّ عُمْرَةً فِىْ رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً، ‘নিশ্চয়ই রামাযান মাসের ওমরাহ একটি হজ্জের সমান। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৯।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, إنَّ عُمْرَةً فِىْ رَمَضَانَ تَقْضِىْ حَجَّةً مَّعِىْ ‘রামাযান মাসে ওমরা করা আমার সাথে হজ্জ করার ন্যায়’। বুখারী হা/১৮৬৩; মুসলিম হা/৩০৩৯।

হযরত আয়েশা (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! মহিলাদের উপরে ‘জিহাদ’ আছে কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ আছে। তবে সেখানে যুদ্ধ নেই। সেটি হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’। আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৫৩৪।
তিনি বলেন, ‘বড়, ছোট, দুর্বল ও মহিলা সকলের জন্য জিহাদ হ’ল: হজ্জ ও ওমরাহ’। ছহীহ নাসাঈ হা/২৪৬৩।
তিনি বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ আমল হ’ল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান আনা। অতঃপর শ্রেষ্ঠ হ’ল আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা। অতঃপর শ্রেষ্ঠ হ’ল কবুল হজ্জ’। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৬।
তিনি বলেন, وَفْدُ اللهِ ثَلاَثَةٌ: الغَازِى وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ ‘আল্লাহ্র মেহমান হ’ল তিনটি দল: আল্লাহ্র রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজ্জকারী ও ওমরাহকারী’। নাসাঈ, মিশকাত হা/২৫৩৭।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফা দিবসের দো‘আ…’। তিরমিযী, মিশকাত হা/২৫৯৮; ছাহীহাহ হা/১৫০৩।
তিনি বলেন, ‘আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন আল্লাহ এত অধিক পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন না। ঐদিন আল্লাহ নিকটবর্তী হন। অতঃপর আরাফাহ ময়দানের হাজীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন ও বলেন, দেখ ঐ লোকেরা কি চায়’? মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৯৪।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘ওরা আল্লাহ্র মেহমান। আল্লাহ ওদের ডেকেছেন তাই ওরা এসেছে। এখন ওরা চাইবে, আর আল্লাহ তা দিয়ে দিবেন’। ইবনু মাজাহ হা/২৮৯৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮২০।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ, ওমরাহ কিংবা জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হ’ল এবং রাস্তায় মৃত্যুবরণ করল, আল্লাহ তার জন্য পূর্ণ নেকী লিখে দিবেন’। বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২৫৩৯; ছহীহাহ হা/২৫৫৩।
হাজারে আসওয়াদ ও ত্বাওয়াফ (الحجر الأسود والطواف) :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রুক্নে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করবে, তার সমস্ত গোনাহ ঝরে পড়বে’। ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭২৯; ছহীহ নাসাঈ হা/২৭৩২।
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্র সাতটি ত্বাওয়াফ করবে ও শেষে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, সে যেন একটি গোলাম আযাদ করল’। ‘এই সময় প্রতি পদক্ষেপে একটি করে গোনাহ ঝরে পড়ে ও একটি করে নেকী লেখা হয়’। তিরমিযী ও অন্যান্য, মিশকাত হা/২৫৮০।
তিনি বলেন, ‘ত্বাওয়াফ হ’ল ছালাতের ন্যায়। তবে এই সময় প্রয়োজনে যৎসামান্য নেকীর কথা বলা যাবে’। তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৫৭৬; ইরওয়া হা/১১০২।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন হাজারে আসওয়াদকে উঠাবেন এমন অবস্থায় যে, তার দু’টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখবে ও একটি যবান থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দিবে, যে ব্যক্তি খালেছ অন্তরে তাকে স্পর্শ করেছে’। তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/২৫৭৮।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘হাজারে আসওয়াদ’ প্রথমে দুধ বা বরফের চেয়েও সাদা ও মসৃণ অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর বনু আদমের পাপ সমূহ তাকে কালো করে দেয়’। তিরমিযী, মিশকাত হা/২৫৭৭; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭৩৩।

 মনে রাখা উচিত যে, পাথরের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। আমরা কেবলমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের উপর আমল করব। যেমন ওমর ফারূক (রাঃ) উক্ত পাথরে চুমু দেওয়ার সময় বলেছিলেন,
إِنِّىْ لَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلاَ تَضُرُّ، وَلَوْلاَ أَنِّيْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عليه وسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ، متفق عليه-
‘আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারো না। তবে আমি যদি আল্লাহ্র রাসূলকে না দেখতাম তোমাকে চুমু দিতে, তাহ’লে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না’। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৮৯।
ওমর ফারূক (রাঃ) উক্ত পাথরে চুমু খেয়েছেন ও কেঁদেছেন’। বায়হাক্বী ৫/৭৪ পৃঃ, সনদ জাইয়িদ।
যমযম পানি ( ماء زمزم ): ত্বাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত ছালাত অন্তে মাত্বাফ থেকে বেরিয়ে পাশেই যমযম কুয়া এলাকায় প্রবেশ করবে এবং সেখানে যমযমের পানি বিসমিল্লাহ বলে দাঁড়িয়ে পান করবে ও কিছুটা মাথায় দিবে। ইরওয়া ৪/৩৩২-৩৩ পৃঃ হা/১১২৬-এর আলোচনা দ্রঃ।
যমযম পানি পান করার সময় ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত বিশেষ দো‘আ পাঠের প্রচলিত হাদীছটি যঈফ। ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩৯১২; ছহীহাহ হা/১০৫৬।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
خَيْرُماءٍ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ، فِيْهِ طَعَامٌ مِِّنَ الطُّعْمِ وَشِفَاءٌ مِّنَ السُّقْمِ
‘ভূপৃষ্ঠে সেরা পানি হ’ল যমযমের পানি। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিকর খাদ্য এবং রোগ হ’তে আরোগ্য’। আহমাদ, মুসলিম; ছহীহাহ হা/১০৫৬।
অন্য বর্ণনায় এসেছে إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ ‘এটি বরকত ম-িত’। দারাকুৎনী, হাকেম, ছহীহ তারগীব হা/১১৬৪।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এই পানি কোন রোগ থেকে আরোগ্যের উদ্দেশ্যে পান করলে তোমাকে আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন’। ছহীহ বুখারী হা/৩৩৬৪; দ্রঃ লেখক প্রণীত ‘নবীদের কাহিনী’ ১/১৩৪-৩৫ পৃঃ।
‘যমযম’ (زمزم) : ১৮ ফুট দৈর্ঘ, ১৪ ফুট প্রস্থ ও অন্যূন ৫ ফুট গভীরতার এই ছোট্ট কুয়াটি অত্যাশ্চর্য বৈশিষ্ট্যম-িত। বিগত প্রায় চার হাযার বছরের অধিককাল ধরে এই কুয়া থেকে দৈনিক হাযার হাযার গ্যালন পানি মানুষ পান করছে ও সুস্থতা লাভ করছে। কিন্তু কখনোই পানি কম হ’তে দেখা যায়নি বা নষ্ট হয়নি। বিজ্ঞানীরা বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অবশেষে এ পানির অলৌকিকত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের ল্যাবরেটরী রিপোর্ট এই যে, এ পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সল্টের আধিক্যের কারণেই পানকারী হাজীদের ক্লান্তি দূর হয়। অধিকহারে ফ্লোরাইড থাকার কারণে এ পানিতে কোন শেওলা ধরে না বা পোকা জন্মে না’। অথচ দেড় হাযার বছর আগেই নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এ পানির উচ্চগুণ ও মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা করে গেছেন (দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী ৪/৭ সংখ্যা, এপ্রিল ২০০১, পৃঃ ১৭-১৮)।
বস্তুতঃ যমযম হ’ল আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহে সৃষ্ট এক অলৌকিক কুয়া। যা শিশু ইসমাঈল ও তার মা হাজেরার জীবন রক্ষার্থে এবং পরবর্তীতে মক্কার আবাদ ও শেষনবী (ছাঃ)-এর আগমন স্থল হিসাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়েছিল। আহমাদ, ইবনু মাজাহ, ইরওয়া হা/১১২৯।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মসজিদুল হারামে ছালাত আদায় করা একলক্ষ গুণ উত্তম’। মুসলিম, নাসাঈ, আবুদাঊদ প্রভৃতি; ইরওয়া হা/১০৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮২।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ উটের পিঠে বসে কংকর মারার সময় বলেন, خُذُوا عَنِّى مَناسِكَكُمْ ‘হে জনগণ! তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখে নাও। কেননা আমি জানিনা, এ বছরের পরে আমি আর হজ্জ করতে পারব কি-না। মুসলিম, নাসাঈ, আবুদাঊদ প্রভৃতি; ইরওয়া হা/১০৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮২।
অতএব হজ্জের প্রতিটি অনুষ্ঠান সঠিকভাবে খুবই সম্মান ও নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সম্পাদন করা কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম সেভাবেই হজ্জ ও ওমরাহ পালন করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *